অশ্লীলতা রোজাকে দুর্বল করে দেয়


মাহে রমজান পবিত্রতম অধ্যায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিন বান্দা রমজানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিজের আত্মা ও সত্তাকে পবিত্র করে তুলবে সে জন্য রমজানের রোজাকে ফরজ করেছেন। কিন্তু শুধু রোজার বাহ্যিক অনুশীলনটাই আত্মার পবিত্রতা অর্জনের জন্য যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে কিছু বৈষয়িক বিধিনিষেধ মান্য করাও জরুরি। বাহ্যিকভাবে কেউ সুবেহ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য, পানীয় ও যৌনতা বর্জন করলে মাসআলা অনুযায়ী তার রোজা হবে। কিন্তু নিজের আত্মাকে পবিত্র করে তুলতে ব্যর্থ হলে ওই বাহ্যিক রোজার কোনো মূল্য বা সওয়াব পাওয়া যাবে না। এক হাদিসে রাসুলে করিম (স.) বলেছেন : বহু রোজাদার এমন আছে যাদের রোজার বিনিময়ে ক্ষুধা আর পিঁপাসার কষ্ট ছাড়া অন্য কিছুই অর্জিত হয় না। অর্থাৎ তারা রোজার বিনিময়ে কোনো পুণ্য বা সওয়াব পায় না। ( মুসনাদে আহমাদ : ৯৬৮৫, সুনানে দারামি : ২৯২৩, সুনানে ইবনে মাজা : ১৬৯, আস্-সুনানুল কুবরা : ৩২৩৬ ) যে সমস্ত বিষয় রোজার পুণ্যকে নষ্ট করে দেয় তার মধ্যে অন্যতম হলো অশ্লীলতা।
রোজোর যে সীমাহীন ফজিলতের কথা হাদিসে বলা হয়েছে, সেটা কিন্তু একেবারে শর্তহীন নয়। বরং আচরণ ও চরিত্রকে অশালীনতামুক্ত করা একটি অপরিহার্য শর্ত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন : রোজাদার বনি আদমের প্রত্যেকটি আমলের সওয়াব দশগুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। মহান আল্লাহ বলেছেন, রোজা শুধুই আমার জন্য আর আমি নিজে এর পুরস্কার প্রদান করব। কেননা সে (রোজাদার) তার শাহওয়াত (যৌবিক তাড়না ) ও খাদ্যকে শুধু আমার (সন্তুষ্টি অর্জনের) জন্য বর্জন করে। (সহিহ আল-বোখারি : ৫৯২৭, সহিহ মুসলিম : ১১৫১, ইবনে মাজা : ১৬৩৭, মুসনাদে আহমাদ : ৯৭১২, মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা : ৮৮৯৪)। হাদিসের ভাষ্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুমিন বান্দাকে রোজার জন্য অসীম পুরস্কার দান করবেন তখনই, যখন সে রোজা রাখার মাধ্যমে তার যৌবিক ক্ষুধাকে দমন করতে পারবে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আমাদের সমাজে বেপর্দা, বেহায়াপনা আর অশ্লীলতা অত্যন্ত মারাত্মক পর্যায়ে নেমে গেছে। রোজা ও রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষার্থে সকল প্রকারের অশ্লীলতাকে দমন করা জরুরি। কারণ অশ্লীলতা আমাদের সমাজে জন্য সাংঘাতিক বেমানান। অপরদিকে মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষার জন্য এবং রোজাদারের রোযা পরিপূর্ণ করারর জন্য অশ্লীলতা দমন করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। অশ্লীলতা রোজাকে দুর্বল ও সওয়াব শূন্য করে দেয়।
অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা এবং বেপর্দা সম্পর্কে কিছু বললেই অনেকে ধরে নেন, নারীর অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করা হলো। আসলে বেপর্দা আর অশালীনতার সঙ্গে নারীর অধিকারের কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলামে পোশাকের বিধান হলো, যৌনাঙ্গকে আবৃত করা এবং নিজের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলা। কিন্তু আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষের চিন্তা সম্পূর্ণ উল্টো। তারা পোশাকের মাধ্যমে নিজের যৌনাঙ্গকে প্রকাশ করাকেই সৌন্দর্য বলে মনে করেন। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন, ‘হে বনি আদম! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে আর অবতীর্ণ করেছি সৌন্দর্যের পোশাক এবং পরহেজগারির পোশাক আর এটিই সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে। (সুরা আল-আরাফ ২৬)।
মোট কথা হলো নারী হোক বা পুরুষ নিজের যৌনাঙ্গ ও তার আকৃতি জনসমক্ষে প্রদর্শন কারা চরম অশালীনতা। সঙ্গে সঙ্গে অশালীন কথাবার্তা ও অঙ্গভঙ্গি সবই ইসলামী শরিয়তে হারাম। পুরুষ যেমন তার প্রয়োজনে বিচরণ করবে তেমনি নারীও তার প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে এখানে ইসলামী বিধানে কোনো পার্থক্য করা হয়নি। ইসলাম নারীকে যেমন তার শরীর আবৃত করে পোশাক পরতে বলেছে, তেমনি পুরুষকেও বলেছে একই কথা। সুতরাং নারী-পুরুষ সবার জন্য শালীনতা রক্ষা করা অপরিহার্য; বিশেষ করে মাহে রমজান ও রোজার পবিত্রতা রক্ষার জন্য সমাজ থেকে সকল প্রকার অশ্লীলতা দূর করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কর্তব্য। Web Desk

No comments:

Post a Comment