গ্রাফিক ডিজাইনের ইতিহাস History of Graphic Design (২য় পর্ব)


অক্ষরের আবিস্কার ও লেখার প্রচলনঃ

খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ হাজার বছর থেকেই এ যুগের শুরু ধরা যায়।
ইতোমধ্যেই মানুষ কিছু চিহ্নের ব্যবহার শিখেছে, আর কথক ভাষাও আয়ত্তে এনেছে । মূলত এই সময়েই মানুষ কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল হতে শুরু করে, সেই জন্য প্রয়োজনের খাতিরেই তাদের সূর্য মাস-চন্দ্র মাস, জলবায়ু ও ঋতু বিষয়ে মনোযোগী হতে হয়, এসব কারনেই তাদের লিখিত মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
বছরের কোন সময়ে বেশী তাপ মাত্রা থাকে বা কখন বেশী বৃষ্টি হয় এসব হিসেবের জন্য তাঁরা লেখার সাথে সাথে ইলাস্ট্রেশনেও অভিজ্ঞতা লাভ করতে শুরু করে। টাইপ ফেসের সাথে ছবির যোগসুত্রই প্রথম গ্রাফিক আর্টের সুচনা করে। এই সময়েই মানুষ নাগরিক হতে থাকে, তাঁরা দেয়াল তুলে ঘর বানায়, সে ঘরে ফুল আঁকে, সেখানে আলোকসজ্জা হয়, সেখানে তাঁরা প্রিয়জনের স্মৃতি যতনে সংরক্ষন করে – এভাবেই গড়ে উঠতে থাকে প্রাথমিক গ্রাফিকাল ভিজুয়াল। এপিটাফে কথা লিখে রাখাও অনেক বড় একটা গ্রাফিকাল অর্জন মানুষের।
আসির্যকরাই প্রথম মাটির পাত্রে খোদায় করা শিখেছিল, অবশ্য একই সময়ে গ্রিসে, হরপ্পায় এবং ইজিপ্টে মাটির পাত্র দেখা যায়- যা তত্তগত ভাবে কাছাকাছি সময়ের। চামড়ার ব্যাগে পানি সংরক্ষনের ঝামেলা হেতু মানুষ মাটির পাত্র কোন দুরঘতনা বশত পোড়ানো শিখেছিল, এটাও একটা বিশাল বড় বিপ্লব ছিল, যেমনটা মানুষ শিখেছিল প্রয়জনে আগুন জালাতে। তবে পরিশালিত গ্রাফিক ডিজাইনের আদি নিদর্শন পাওয়া যায় চীনে, ৩৫৩ খ্রিস্টপূর্বে। Poems Composed at the Orchid Pavilion এর অয়াং ঝির ইলাস্ত্রেশন।

 
চিত্রঃ ০২
Poems Composed at the Orchid Pavilion
১২৪০ খ্রিস্টপূর্বতে মিশরের Book of the Dead ইলাশট্রেশনটিও বলা যায় একটি ভাল গ্রাফিক ডিজাইনের নিদর্শন।
The Papyrus of Ani is a version of the Book of the Dead for the Scribe Ani. This vignette (small scene that illustrates the text) is Chapter for not letting Ani's heart create opposition against him in the God's Domain


রোমান গ্রাফিক ডিজাইনঃ

দুঃখের বিষয় হল গ্রিসের গ্রাফিক আর্টের নিদর্শন আমরা ততটা পাইনা যতটা স্থাপত্যে বা ভিজুয়াল আর্টে পাই। গ্রীক মনিষীদের হাতে লেখা পুস্তকের যদি কিয়দাংশ আমরা পেতাম তাহলে সেটা হত গ্রাফিক ডিজাইনের অমূল্য সম্পদ। কিন্তু শহরের উপর উপুর্যুপরি প্রাকৃতিক ও যুদ্ধের ধ্বংসলীলা নেমে আসায় সেগুলোর অনেক কিছুই ধ্বংস হয়ে যায়। তবে গ্রীস প্রভাবিত রোমানদের ডিজাইনে আমরা সমৃদ্ধ। বিশেষ করে আটলান্টিকের দুই পাড়ের বিপুল সংখ্যক দেশের/অঞ্চলের টাইপ ফেস এ বিশাল ভুমিকা রেখেছে। বলা যায় প্রিথিবীর দুই তৃতীয়াংশ মানুষের লেখার হরফ ল্যাটিন থেকেই বিবর্তিত। আর এক্ষেত্রে রোমান হরফের ভুমিকা অনবদ্য। রোমান হরফের প্রচলন টাইপগ্রাফি বিশেষ করে গ্রাফিক ডিজাইনে এক র্যারপিড পরিবর্তনের সুচনা করে।

 
চিত্রঃ ৪ ব্লাকলেটার
টাইপোগ্রাফিতে ব্লাক লেটার থেকে শেরিফ ফন্টে কনভার্ট রোমান টাইপের অসামান্য অবদান। মজার বিষয় হল, করিন্থিয়াস পিলারের কনসেপ্ট থেকেই শেরিফ ফন্টের উদ্ভাবন। পরবর্তিতে স্যান্স শেরিফ ও জিওমেত্রিক ফন্টের সূচনাও রোমান ফন্ট থেকেই হয়েছিল। টোটাল গ্রাফিক ডিজাইনে রোমান টাইপোগ্রাফির একটা ভুমিকা আছে বলা যায়।

 
চিত্রঃ ৬ রোমান টাইপ ইভুলুশন

মেডিভাল পিরয়ড (মধ্যযুগে) গ্রাফিক ডিজাইনঃ
ধাতব মুদ্রাঃ
প্রাক রেনেসাঁর ৪০০ বছর কে আমরা মধ্যযুগ ধরতে পারি।
বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন ও মুসলিম রেনেসাঁর সময়ে গ্রাফিক ডিজাইন ভিন্ন মাত্রা পায়। ততক্ষনে গুটেনবার্গের প্রিন্টিং টেকনোলজির পরিপক্কতা আসে, কাঠের ব্লক ছাড়াও সিসা ও তামার ব্লকে প্রিন্ট হতে থাকে।

চিত্রঃ ৭ গুটেনবার্গ
সবসময় গ্রাফিক ডিজাইন বিবর্তিত হয়েছে মুদ্রন প্রকৌশলের উন্নতির সাথে সাথে। ধাতব মুদ্রায় শাসকের গুনকির্তনের জন্য এর আরেকদফা উন্নতি সাধিত হয়। গ্রাফিক ডিজাইনের এটাও একটা গৌরবের দিক, আঞ্চলিক শাসকবর্গের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের জন্য উত্তরোত্তর প্রিন্টিং টেকনোলজির উন্নতি ঘটতে থাকে। ধাতব মুদ্রায় ডিজাইন মুসলিম যুগের অনন্য কৃতিত্ব।

চিত্রঃ ৮ মুসলিম মুদ্রা
 
কুরআন মুদ্রনঃ
অটোম্যান (উমাইয়া) সময় মুসলিম শাসন পুর্বে এশিয়া মাইনর ও পশ্চিমে স্পেন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, এ সময়ে বিভিন্ন অঞ্চলে কুরআনের চর্চা বেড়ে যাওয়ায় বিপুল পরিমান কুরআন মুদ্রনের প্রয়োজন পড়ে, এ বিষয়ে সেই সময়ের শ্রেষ্ঠ মুদ্রন বিশারদরা টেকনোলোজির আর উন্নতি সাধন করেন, সেই সাথে অলঙ্করণেও মাধুর্যতা আসে। ডিজাইনে মুসলিম রীতির সুস্পষ্ট বৈশিশট প্রকাশ পায়।

 
চিত্রঃ ৯ কুরআন

No comments:

Post a Comment